সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অশান্তির আশঙ্কার মধ্যেই আমেরিকায় চলছে শেষপর্বের ভোটগ্রহণ। মার্কিন সময়মতো রাত পোহালেই সেই বহু প্রতীক্ষিত মঙ্গলবার (3 November)। আগামী চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করবেন দেশের প্রায় ১৫.৩ কোটি নথিভুক্ত ভোটার। যা মোট ভোটদাতার ৬৫ শতাংশ। ইতিমধ্যেই, করোনা মহামারীর জেরে মেল-ইন-ব্যালট বা ‘আর্লি ভোটিং’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটদান করেছেন অনেকেই। আর পরিসংখ্যান বলছে হোয়াইট হাউস দখলের দৌড়ে এগিয়ে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বিডেন (Joe Biden)। তবে মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রার্থী তথা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দৌড় থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন তা একেবারেই বলা যায় না। কারণ, সমীক্ষার জটিল অঙ্ক বেমালুম গুলিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তে বাজি জেতার বহু উদাহরণ রয়েছে আমেরিকার ইতিহাসে।
ভোটগ্রহণের শেষপর্বে নিউ ইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজের একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে পেনসিলভানিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা, উইসকনসিনের মতো ‘সুইং স্টেট’গুলিতে এগিয়ে রয়েছেন বিডেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ২০১৬ সালে এই রাজ্যগুলিতে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। সিএনএন-এর একটি সমীক্ষা বলছে, অ্যারিজোনা, মিশিগান ও নর্থ ক্যারোলিনাতেও রিপাবলিকানদের অবস্থা খুব একটা আশাপ্রদ নয়। ওই রাজ্যগুলিতেও এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বিডেন। গ্রহণযোগ্যতা ও দেশকে সামলানোর বিষয়ে বিডেনের উপরই বেশি আস্থা রয়েছে জনতার বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। এই রাজ্যগুলিও গতবারের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে নিজের ঝুলিতে পুড়তে সক্ষম হয়েছিলেন ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ভোটে জিততে গেলে নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হয়। সেখানে কখনও একটি বড় রাজ্য প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বরং একাধিক ছোট রাজ্য নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। ৫০টি রাজ্যের মধ্যে এখানে এমন কিছু রাজ্য আছে যেগুলি ‘ডেমোক্র্যাট’ বলে পরিচিত। এই রাজ্যগুলি প্রধানত আমেরিকার দুই উপকূলে অবস্থিত। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউ ইয়র্ক। উপকূলে অভিবাসীদের ভিড়। অভিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক। এইসব রাজ্যে কখনওই দাঁত ফোটাতে পারে না রিপাবলিকানরা। আবার মধ্য আমেরিকায় যেখানে অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যার কম অংশ, সেখানে বিপুল শক্তি রিপাবলিকান পার্টির। মধ্য আমেরিকা মূলত কৃষিপ্রধান। এখানকার কৃষিজীবী, রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গরা রিপাবলিকানদের বিশাল ভোটব্যাঙ্ক। এই অঞ্চলে ডেমোক্র্যাটরা দাঁত ফোটাতে পারে না। ফলে ৫০টি রাজ্যের মধ্যে যে রাজ্যগুলি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে, সেগুলি বাদ দিয়ে মার্কিন রাজনীতির হিসেবনিকেশ হয়। তাতে করে ফ্লোরিডা, আইওয়া, ওয়াইহো, পেনসেলভিনিয়ার মতো মিশ্র জনসংখ্যার রাজ্যগুলির গুরুত্ব সব নির্বাচনেই অনেক বেশি হয়। এই রাজ্যগুলিকেই আমেরিকার ভোট-রাজনীতিতে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ বলা হয়ে থাকে। এরা কখনও ডেমোক্র্যাটদের দিকে, কখনও রিপাবলিকানদের দিকে ঝোঁকে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন অনেকটাই আলাদা। বর্ণবিদ্বেষ, বিদেশি হস্তক্ষেপ তথা মেল-ইন-ব্যালটে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে সরগরম মার্কিন রাজনীতি। বিশেষ করে করোনা মহামারী ও পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবারের নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। আমেরিকায় করোনায় মৃত ২ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি। নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তার পরেও ট্রাম্প বলছেন, ‘দেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’। হুমকি দিয়েছেন, ফের ক্ষমতায় এলে তাঁর অন্যতম প্রধান সমালোচক, করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান অ্যান্টনি ফাউচিকে বরখাস্ত করবেন। এই সঙ্কট সামলাতে না-পারাটা প্রেসিডেন্টের বিপক্ষেই যাবে বলে মনে করছেন সমীক্ষকেরা। আর মেল-ইন-ব্যালট মানবেন না বলে আগেই বলে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে প্রেসিডেন্টের গদি দখলের লড়াইয়ে ছায়া ফেলেছে অশান্তির আশঙ্কা। হিংসা হতে পারে বলে এর আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গও। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গা থেকে অশান্তির খবর আসছে। টেক্সাসের সড়কে বিডেনের ক্যাম্পেন বাস আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের উগ্র ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সিতেও ট্রাম্প সমর্থকরা রাস্তা আটকে দিয়েছেন বলে খবর। হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.